

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়িসহ দেশে-বিদেশে ৬৮ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে। দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদা এই মামলাটি দায়ের করবেন।
দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, আবদুস সোবহান গোলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি গড়েছেন, যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ কোটি টাকা।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গোলাপের ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এছাড়াও, তার পারিবারিক ব্যয় ২৫ লাখ ৮২ হাজার ২৬৭ টাকা। সব মিলিয়ে তিনি ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। কিন্তু, এর বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় মাত্র ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার ৬২৯ টাকা। অর্থাৎ, বাকি ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকার সম্পদ তিনি ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে’ অর্জন করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আবদুস সোবহান গোলাপের নিজের ৫১টি ব্যাংক হিসাবে ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছে।
এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি আদালত গোলাপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আদালতের সম্পদ জব্দের আদেশ অনুযায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাপ, তার স্ত্রী গুলশান আরা মিয়া, ছেলে ইভান সোবহান মিয়া ও মেয়ে আনিশা গোলাপ মিয়ার নামে এসব স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে মিরপুরের একটি পাঁচতলা বাড়িও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়িগুলোর মধ্যে আটটি সিঙ্গেল রেসিডেনসিয়াল কন্ডো ইউনিট এবং অপরটি ডুয়েল ফ্যামিলি ইউনিট।
গত বছরের ২ অক্টোবর আদালত আবদুস সোবহান গোলাপের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা গোলাপকে রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় একটি হত্যার ঘটনাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট আবদুস সোবহান মিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৯টি বাড়ি কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে মোট ৯টি প্রপার্টির মালিক হন।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আবদুস সোবহান গোলাপ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।