লোটাস কামালের সময়ে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলার অবনতি, খেলাপি ঋণে রেকর্ড বৃদ্ধি

print news
img

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়াদে (২০১৯-২০২৪) দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ম-শৃঙ্খলা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। বিশ্লেষক ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, তার সময়ে খাতটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, তা ২০২৪ সালে দাঁড়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটিতে। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আকারে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পৌঁছেছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।

অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে একাধিকবার তিনি বলেছিলেন, “আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না।” কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল তার বিপরীত। বিভিন্ন প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ, এবং পরবর্তীতে সেসব ঋণ নিয়মিত না হওয়া সত্ত্বেও ‘ভালো গ্রাহক’ হিসেবে দেখানোর মতো ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয়।

নিজের প্রতিষ্ঠানও খেলাপি:

সোনালী ব্যাংকের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে আসে, ‘লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত পরিশোধ না করা সত্ত্বেও তাকে ‘নন-ক্লাসিফায়েড’ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের নামে হলেও, এর নিয়ন্ত্রণ ছিল সরাসরি কামালের হাতে বলে জানা গেছে।

একইসঙ্গে প্রিমিয়ার ও পদ্মা ব্যাংকেও রয়েছে কোটি কোটি টাকার এলসি দায়, যেগুলোর পরিশোধ শেষ হওয়ার পরও এখনো পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগ:

২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসেও মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে তিনি সংসদীয় কমিটির সভাপতি থাকা অবস্থায় বাজার কারসাজিতে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের রিপোর্টেও তার নাম উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বহু বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছেন।

ব্যাংক হিসাব জব্দ, তবে আগেই অর্থ সরানোর অভিযোগ:

২০২৩ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক তার, তার স্ত্রী ও কন্যার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। তবে এর আগেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সূত্রে।

ব্যাংকগুলোর ভিন্ন বক্তব্য:

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে লোন পাওনা হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের নাম থাকলেও, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো দাবিকে অস্বীকার করছে। প্রিমিয়ার ও পদ্মা ব্যাংকের বক্তব্য, এখন আর কোনো দেনা নেই, অথবা তা অতীতের ভুল বোঝাবুঝি।

বিশ্লেষণ:

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এমনিতেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুবিধাপ্রাপ্তি, দুর্বল তদারকি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সিস্টেমিক দুর্বলতা আরও প্রকট হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

সূত্র: কালের কণ্ঠ ও অন্যান্য সংবাদভিত্তিক প্রতিবেদন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *