‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও চারস্তরের দাবি উত্থাপন

print news
img

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের নীরবতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করে চার স্তরে নানা দাবি উপস্থাপন করা হয়। ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ, মুসলিম উম্মাহ, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি একযোগে বার্তা দেওয়া হয়।

সমাবেশে বলা হয়, ফিলিস্তিন আজ কেবল একটি ভূখণ্ড নয়—বরং মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের প্রতীক। গাজা এখন শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা নয়, বরং একটি প্রশ্ন—উম্মাহর সম্মিলিত ব্যর্থতার আয়না। এমন এক সময়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্বব্যবস্থা ইসরায়েলের গণহত্যা ও আগ্রাসনকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছে, বরং অনেক দেশ অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে সে আগ্রাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দাবি

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু নীরবই নয়, অনেক সময় প্রত্যক্ষভাবেই দখলদার ইসরায়েলকে রক্ষা করছে। সেহেতু সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়:
১. ইসরায়েলের গণহত্যার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. যুদ্ধবিরতির নাটক নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. ১৯৬৭ সালের আগের ভূমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে।
৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ও ওআইসির প্রতি বার্তা

ঘোষণাপত্রে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসিকে উদ্দেশ করে বলা হয়—জায়নবাদ কেবল বাইরের শত্রু নয়, এটি উম্মাহর ভেতরের ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যহীনতার সুযোগে গড়ে উঠেছে। তাই অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা, তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং গাজার জনগণের পাশে সর্বাত্মকভাবে দাঁড়ানো জরুরি। বিশেষভাবে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড—বিশেষ করে ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধেও জোর প্রতিবাদ জানানো আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান

ফিলিস্তিন প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে সরকারের প্রতি ছয়টি দাবি জানানো হয়:
১. বাংলাদেশের পাসপোর্টে পুনরায় ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি ফিরিয়ে আনা।
২. ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা সব ধরনের গোপন বা প্রকাশ্য চুক্তি বাতিল করা।
৩. গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো।
৪. জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দেওয়া।
৫. ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ জানানো।
৬. পাঠ্যপুস্তকে ফিলিস্তিন, আল-আকসা ও মুসলিম ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা।

জনগণের প্রতি আত্মপ্রত্যয় ও অঙ্গীকার

ঘোষণাপত্রে জনগণের প্রতি নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। ইসরায়েল সমর্থিত কোম্পানির পণ্য বর্জন, আদর্শবান প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং সমাজে ঐক্যের ভিত গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। বলা হয়, গাজা আজ শুধু রক্তক্ষয়ী বাস্তবতা নয়—একটি আয়না, যেখানে দেখা যায় বিশ্বাসী হওয়ার মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা।

গাজাবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া

ঘোষণাপত্রের শেষাংশে গাজার শহীদ ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ ও ত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়—তাঁরা শুধু দোয়া নয়, চায় আমাদের প্রস্তুতি। উচ্চারিত হয় একান্ত দোয়া:
“হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে সব জায়োনিস্টদের ষড়যন্ত্র।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *