

ঢাকার বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। তিনি ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পারভেজ সোমবার আলামিনের দোকানের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ও হাসছিলেন। ঠিক তখন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের একজন প্রথম বর্ষের ছাত্র আবুজর গিফারি ওরফে পিয়াসের প্রেমিকা। বিষয়টি মোবাইল ফোনে পিয়াসকে জানানো হলে, তিনি সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে আসেন এবং বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হামলা চালান। এতে ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মারা যান পারভেজ।
ঘটনার পর পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির বনানী থানায় মামলা করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। নাম উল্লেখিতদের মধ্যে আছেন—মেহেরাজ ইসলাম, আবুজর গিফারি (পিয়াস), মো. মাহাথির হাসান, সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজী, রিফাত, আলী ও ফাহিম। এজাহারে তুষার ও হৃদয়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পারভেজের ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জড়িত। তিনি দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিলও করে ছাত্রদল।
অন্যদিকে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক ফেসবুক পোস্টে সংগঠনটি দাবি করে, “ছাত্রদল একটি মৃত মানুষের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছে।” তারা দাবি করে, সংগঠনের বনানী থানা যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজী এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। সিসিটিভি ফুটেজেও তাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি বলে জানানো হয়।
এদিকে, ঢামেক মর্গে নিহত পারভেজের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবির জানান, “পারভেজ শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল, কোনো মারামারির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, “হাসাহাসি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া একটি ঘটনাই বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়। তদন্ত চলছে, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘিরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গনে চরম উদ্বেগ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।