

লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) আর্সেনালকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছে। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে উসমান দেম্বেলের করা একমাত্র গোলটি পিএসজিকে ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠা আর্সেনাল শুরুতেই ধাক্কা খায়। তবে, সময়ের সাথে সাথে তারা খেলায় ফিরে আসার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ার্ধে মিকেল মেরিনোর একটি গোল ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় বাতিল হয়ে যায়। এছাড়াও, পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুম্মা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে আর্সেনালের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের হতাশ করেন।
ম্যাচের শেষ দিকে পিএসজির ব্র্যাডলি বারকোলা এবং গনকালো রামোস গোল করার সহজ সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। তারা গোল করতে পারলে পিএসজি আরও বড় ব্যবধানে জয় পেতে পারত।
আগামী বুধবার প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য ফিরতি লেগে যদি পিএসজি তাদের এই লিড ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তবে তারা ফাইনালে ইন্টার মিলান অথবা বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে।
এই পরাজয় আর্সেনালের জন্য একটি বড় ধাক্কা হলেও দলের গোলরক্ষক ডেভিড রায়া মনে করেন এখনও সবকিছু শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ‘ম্যাচের ২৫ মিনিট পর থেকে আমরা দেখিয়েছি যে আমরা যেকোনো দলের বিপক্ষে লড়াই করতে এবং জিততে পারি। এই মৌসুমে আমরা প্রতিপক্ষের মাঠেও জয় পেয়েছি, তাই আমরা আগামী সপ্তাহে প্যারিসে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই যাব।’
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে গ্রুপ পর্বে আর্সেনাল তাদের ঘরের মাঠে পিএসজিকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল। তবে, লুইস এনরিকের অধীনে পিএসজি বর্তমানে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।
গ্রুপ পর্বে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারানোর পাশাপাশি শেষ ষোলোতে তারা বর্তমান প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে বিদায় করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাস্টন ভিলার বিরুদ্ধেও তারা রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে।
ঘরের মাঠে দর্শকদের ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও পিএসজি ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্সেনালকে নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেয়নি। তাদের দ্রুত গতি ও খেলোয়াড়দের মুভমেন্টের সঙ্গে পাল্লা দিতে ব্যর্থ হয় মিকেল আরতেতার দল। খেলা শুরুর পূর্বে স্টেডিয়ামের আতশবাজির ধোঁয়া পুরোপুরি না সরতেই গোল হজম করে আর্সেনাল।
বাঁ দিক থেকে খভিচা কভারাত্সখেলিয়ার বাড়ানো বল ডি-বক্সে পেয়ে যান দেম্বেলে, যিনি জোরালো শটে বল জালে জড়ান।
শুরুর দিকে গোল খেয়ে চাপে পড়া আর্সেনালের লিয়ান্দ্রো ট্রোসার্ড আক্রমণে ছুটে যাওয়া পিএসজির আশরাফ হাকিমিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন। এরপর হাকিমির ক্রস থেকে মারকুইনহোসের নেওয়া শট সরাসরি আর্সেনাল গোলরক্ষক ডেভিড রায়ার হাতে জমা পড়ে। প্রথমার্ধে কভারাত্সখেলিয়া আর্সেনালের রক্ষণভাগের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। জুরিয়েন টিম্বারের সঙ্গে একটি সংঘর্ষে পেনাল্টির জোরালো আবেদনও জানান তিনি।
বিরতির আগে বুকায়ো সাকার ক্রসে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি গোলের কাছাকাছি গিয়েও বলে পা লাগাতে পারেননি। এরপর ডনারুম্মার একটি অসাধারণ সেভে গোল বঞ্চিত হয় আর্সেনাল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মনে হয়েছিল আর্সেনাল সমতায় ফিরেছে। ডেকলান রাইসের ফ্রি কিক থেকে মেরিনোর হেড জালে জড়ালেও ভিএআর চেকের পর সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল করা হয়।
কিছু সময়ের জন্য আর্সেনাল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিলেও পিএসজির রক্ষণভাগ কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছিল। এই সুযোগে ট্রোসার্ডের নেওয়া একটি নিচু শট দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন ডনারুম্মা।
তবে, ম্যাচের শেষ দিকে পিএসজি বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে। বারকোলা একেবারে ফাঁকা থাকা অবস্থায়ও বল বাইরে মারেন এবং রামোসের শট ক্রসবারে লাগে। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে পিএসজি এবং ফিরতি লেগের জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করে।