

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। এ প্রেক্ষাপটে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার বিএফডিসিতে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ রাজনৈতিক নয়, ঐতিহাসিক’ শীর্ষক ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
রাজনীতি ও ইতিহাস একে অপরের পরিপূরক
মতিউর রহমান বলেন, “যুদ্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ইতিহাস নয়। তবে ইতিহাসকে বাদ দিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করা যায় না।” তিনি মনে করেন, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে বিরোধ বহু পুরনো এবং রাজনৈতিকভাবে উভয় পক্ষের জন্য তা একটি কৌশলগত উপাদান।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাগতভাবে বিপদে পড়বে। এখন থেকেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভুয়া খবর ও এআই-নির্ভর তথ্য যেভাবে যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে, তা আমাদের জন্যও বড় ঝুঁকি।”
ভুয়া খবর ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
ভুয়া সংবাদের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোনো দেশ—এই আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক পথে আছে। কিন্তু যেকোনো বক্তব্য, যেকোনো আচরণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সময়মতো জনগণকে অবহিত করতে হবে।”
চীন ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ
তিনি আরও বলেন, “চীনের নজর এখন ‘সাত কন্যা’ বা উত্তর-পূর্ব ভারতে। ইস্টার্ন ফ্রন্টে উত্তেজনা বেড়ে গেলে এর কৌশলগত প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।” তিনি এ প্রসঙ্গে শেয়ার বাজারে ধস, আমদানি ব্যয় এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও উল্লেখ করেন।
ডিবেট প্রতিযোগিতায় ইতিহাস বনাম রাজনীতি
ছায়া সংসদে বিতর্কে অংশ নেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা। বিজয়ী হন বদরুন্নেসা কলেজের দল। প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদগণ।
ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান কিরণ বলেন, “ভারতীয় হামলায় পাকিস্তানে মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলমানদের হত্যার অভিযোগ যেমন দুঃখজনক, তেমনি ভারতের অভ্যন্তরে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাও নিন্দনীয়। উভয় দেশের জনগণকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিজেপি সরকার কর্তৃক ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে মুসলিমদের উদ্বেগ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।”